দেশকে অচল করতে ফের পরিকল্পনা নিষিদ্ধ আ’লীগের

আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার নেতাকর্মীরা একের পর এক ঝটিকা মিছিল নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করে আসছে।
এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে বাধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশকে অচল করতে পরিকল্পনা করেছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি গোয়েন্দাদের করা এক প্রতিবেদনে এমনটিই উঠে এসেছে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গসংগঠনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এবার দেশকে অস্থিতিশীল করতে আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম ‘ধানমন্ডি-৩২’ গ্রুপে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, নিষিদ্ধ একটি দল অনেক পরিকল্পনাই করবে। আমরা গত ডিসেম্বর থেকেই অনেক ধরনের হুঙ্কার শুনে আসছি। এমনও তথ্য এসেছে তারা সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র এনে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করবে। আমরা এসব নিয়ে এখন আর উদ্বিগ্ন নই। পুলিশ কাজ করছে মানুষের সেবায়। কোনো নিষিদ্ধ দল পরিস্থিতি খারাপ করতে চাইলে পুলিশ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।
এ ছাড়া দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে র্যাব-পুলিশের পোশাকে ছিনতাই-ডাকাতি, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ও আইসিটি ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগর ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গভীর রাতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভার্চুয়াল আলোচনা সভা এবং স্বল্প পরিসরে একত্রিত হয়ে ঝটিকা মিছিল কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছে দলটি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই কর্মসূচির করতে নির্ধারিত দিনের আগে ও পরে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আবার গ্রেফতার এড়ানোর জন্য কর্মসূচি শেষে জনসাধারণের সাথে মিশে যাওয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির পরিকল্পনার এমন তথ্য উঠে আসে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে ও বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচির চেষ্টা করছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা করলেও সব তথ্যই রাখছেন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠন কর্তৃক ঝটিকা মিছিল কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময়ে তারা বিভিন্ন ভাবে একত্রিত হয়ে স্বল্প সময়ের মিছিল করে আবার বিচ্ছিন্ন ভাবে জনসাধারণের সাথে মিশে যাবে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটি কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের পদত্যাগ ও আইসিটি ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধের দাবিতে ক্রমাগত কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলেও জানা যায়।
মাসব্যাপী আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : মাসব্যাপী দলটির কর্মসূচির মধ্যে আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ও আইসিটি ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত সকল থানায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করবে বলে জানা যায়। আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভার্চুয়াল আলোচনা সভা করবে। এ ছাড়া অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণসহ মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ২৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ও আইসিটি ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধের দাবিতে সারা দেশে বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করবে। আগামী ১ জুলাই ইউনূসের পদত্যাগ ও আইসিটি ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধের দাবিতে সকল জেলার সাংগঠনিক কার্যালয় কেন্দ্রিক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করবে। ১৬ জুলাই সকল সাংগঠনিক উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়সহ তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করবে।
রাজধানীতে যে স্থানগুলোতে কর্মসূচির পরিকল্পনা : শের-ই-বাংলা নগর থানাধীন মেট্রোরেল স্টেশন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খেজুর বাগান, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে ও শুক্রাবাদ এলাকায় ঝটিকা মিছিলের পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ধানমন্ডি ৩২ ও ২৭ এবং কলাবাগান সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর বছিলা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা, পল্লবী মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা, বিমানবন্দর হতে বনানী মধ্যবর্তী ফাঁকা যেকোনো জায়গায় এবং মিরপুর কলেজ সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল করতে পারে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছদ্মবেশে ছিনতাই-ডাকাতি : গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছেন, বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছদ্মবেশে ছিনতাই-ডাকাতি করে দলটির কর্মীরা। আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশে এলাকায় অবস্থান করছেন। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে প্রায়ই ছোট-বড় ঘটনা তৈরি করে ওই স্থান থেকে চলে যান। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পড়তে হয় প্রশ্নবিদ্ধের মুখে।
গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন পেশায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা : গত ৫ আগস্টের পর শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশ বিদেশে গেলেও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা হয়েছেন এলাকা ছাড়া। তারা এখন নিজ নিজ জেলা বা এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বিশেষ করে ঢাকায় আত্মগোপনে চলে গেছেন। ছদ্মবেশে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়েছেন তারা। সুযোগ বুঝে নেতার নির্দেশে মিছিল মিটিং করছেন। গ্রেফতার এড়াতে রাতের আঁধারে বা ভোর বেলায় ঝটিকা মিছিল করেন তারা। আবার ঝটিকা মিছিলের ভিডিও ও ছবি আওয়ামী লীগের দলীয় ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আপলোড দিয়েছে এবং দেশে-বিদেশে পলাতক নেতাকর্মীও তা শেয়ার করে শেখ হাসিনা শিগগিরই দেশে ফিরে এসে ক্ষমতায় বসবে বলেও নেতাকর্মীদের চাঙা রাখছেন।
কর্মসূচি নিয়ে যা বললেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : মাসব্যাপী আওয়ামী লীগের কর্মসূচির পরিকল্পনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহম্মাদ তালেবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গসংগঠনের উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। তারা যেকোনো কর্মসূচি করলে তা অবৈধ। আর এই দলটির যেকোনো কর্মসূটির বিরুদ্ধে ডিএমপির সকল ইউনিট তৎপর রয়েছে। ঝটিকা মিছিল বা যেকোনো কর্মসূচি করলে তাদের গ্রেফতার করা হবে। ইতোমধ্যে এ ধরনের কর্মসূচি কেন্দ্রিক গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে।
এ ধরনের কর্মসূচির বিষয়ে র্যাবের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের সবধরনের কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অল্প কয়েকজন হয় গভীর রাত বা ভোর বেলায় কর্মসূচি করেন পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ধরনের কর্মসূচির ক্ষেত্রে র্যাব তৎপর রয়েছে।
June 2025
৩৭-০৫ ৭৩ স্ট্রীট, জ্যাকসন হাইটস, নিউইয়র্ক-১১৩৭২, ফোন: ৬৪৬৩০৯৬৬৬৫, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন ইমেইল: [email protected]